নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝারসিংহেশ্বর ও খগারচর গ্রামের তিস্তা নদীর বাঁধের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করেন। তবে তাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো। দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি থাকলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, ফলে স্থানীয়দের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হন। শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে বর্ষার সময় সাঁকোটি পানির স্রোতে ভেসে যায়। তখন বাধ্য হয়ে কলার ভেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়।
স্থানীয় ব্যক্তি রতন মিয়া বলেন, “প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। এটি আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারাপারের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, অনেকে আহতও হয়েছেন।”
রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “বর্ষার সময় শিশুরা সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পায়। ভারী যানবাহন চলতে পারে না বলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে পারেন না, ফলে তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নেওয়ারও কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এখানে দ্রুত একটি ব্রিজের প্রয়োজন।”
পঞ্চম শেণীতে পড়ুয়া স্থানীয় শিক্ষার্থী ইমন ও সাব্বির হোসেন জানান, “বর্ষার সময় বিদ্যালয়ে যেতে অনেক সমস্যা হয়। সাঁকো পেরোতে গিয়ে প্রায়ই পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমরা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। এখানে দ্রুত একটি ব্রিজ চাই। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ না হলে আমাদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।”
ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, “এই এলাকার শিক্ষার্থী, দরিদ্র কৃষক ও সাধারণ মানুষের জন্য ব্রিজ নির্মাণ খুবই জরুরি। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয়নি।”
ডিমলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. সফিউল ইসলাম জানান, “এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সঙ্গে আলোচনা করে ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।”