নীলফামারীর ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদে ৪০০ টাকা ঘুষ না দেয়ায় এক স্কুল শিক্ষিকা জন্মনিবন্ধনের কাগজ পেতে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা লামিয়া আক্তার খাটুরিয়া হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যান। সকাল ১১টায় পরিষদে পৌঁছানোর পর কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা হলে তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজ জমা দেন।
ওই শিক্ষিকা অভিযোগ করেন, কাগজ জমা দেয়ার পর আসাদুজ্জামান তার কাছে নির্ধারিত সরকারী ফি বাদেও অতিরিক্ত ৪০০ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে নানান অজুহাতে সময়ক্ষেপণ শুরু করেন তিনি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও জন্মনিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষিকা লামিয়া চরম হয়রানির শিকার হন। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষিকা টাকা না দেয়ার কারনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফেরত দেন কম্পিউটার অপারেটর।
শিক্ষিকা লামিয়া আক্তার বলেন, “সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে একজন সেবা প্রার্থী হিসেবে গিয়েছিলাম, কিন্তু ঘুষ না দেয়ায় আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে হয়রানি করা হয়েছে। এটা খুবই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। অনেকের কাছে পূর্বেই তার অনিয়মের কথা শুনেছি কিন্তু সেটা আজ আমার নিজের সাথেই ঘটে গেলো, আমি চাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ তার অনিয়ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।”
মোকলেছার রহমান নামের এক ইউপি সদস্যের অভিযোগ, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ দিশেহারা অবস্থায় আছে। শুধু জন্ম নিবন্ধন নয় নাম সংশোধন, ওয়ারিশান সনদ, প্রত্যয়ন পত্র সহ আরও অনেক ছোটখাটো কাজে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কাজ করে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। প্রশাসনিক বিভাগ গভীর ভাবে অনুসন্ধান চালালে অনেক অনিয়ম দুর্নীতি বের করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন প্রায় সময় অনেক সেবাগ্রহীতাদের হয়রানী করান আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “জন্ম নিবন্ধনের যেটা ফি সেটার বাইরে আর কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। এর বাইরে যদি বাইরের কোনো ব্যক্তি টাকা চেয়ে থাকে সেটাতে আমাদের কোনো দায়ভার নেই। অনেক সময় কিছু কাজের প্রসেস দীর্ঘ হওয়ার কারনে অনেক সময় লেগে যায়, তবে আমরা কাউকে হয়রানী করিনা।”
ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। নির্ধারিত ফি বাদে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি দমন করতে উপজেলা প্রশাসনের তৎপর রয়েছে।