নীলফামারী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নীলফামারী-১ আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেছেন, “১৯৭৫ সালে এই দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই সব দলকে নিষিদ্ধ করে বাকশাল গঠন করেছিলেন।”
রোববার (১৮ মে) বিকেল সাড়ে ৫টায় নীলফামারীর ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে দীর্ঘ ১৮ বছর পর নিজ জেলায় প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত এক গণ-সংবর্ধনা ও জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিমলা উপজেলা বিএনপি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়ার ভূমিকার কথা তুলে ধরে তুহিন বলেন, “যারা শুধু সরকারের কথা শুনতো, তাদের বাদে সব পত্রপত্রিকাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। শহীদ জিয়ার জন্ম না হলে স্বাধীনতার ঘোষণা আসতো না। শেখ মুজিব পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং তার পরিবার, এমনকি শেখ হাসিনা সেই সময় পাক বাহিনীর অধীনে ছিলেন ও ভাতা গ্রহণ করেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে আমরা বিভীষিকাময় সময় পার করেছি। কিছু দুষ্টচক্র ও লোভী সরকারি কর্মকর্তাদের চক্রান্তে আমরা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখন আল্লাহর রহমতে একটি পরিবর্তন এসেছে।”
শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৫ আগস্ট শেখ হাসিনার জন্য ভাত-তরকারি প্রস্তুত ছিল, কিন্তু সেই খাবার খাওয়া হয়নি। অবশেষে সবাইকে নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এটা আল্লাহর বিচার, তিনি যেভাবে সম্মান দেন, ঠিক সেভাবেই সম্মান কেড়ে নেন।”
দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে তুহিন বলেন, “বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। কেউ কেউ বছরের পর বছর বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থা এমন হতে পারে না। আমরা এই শাসনব্যবস্থাকে ধিক্কার জানাই এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা সরকারের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। বিএনপি চায় না কোনো সংঘাত। তবে সঠিক পথে গণতান্ত্রিক নির্বাচন না হলে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা শান্তিপ্রিয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে আর ফিরতে চাই না। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের প্রয়োজন হলে এবং দল নির্দেশ দিলে আমরা আবার রাস্তায় নামবো।”
সংস্কার প্রশ্নে সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, “বিএনপি সংস্কার চায় না—এটা একটি মিথ্যাচার। বিএনপিই প্রথম ২০২৩ সালের জুনে ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল। আজ বিএনপির বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে, সেসব থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিমলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মানোয়ার হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী প্রধান। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগির সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আরিফ-উল-ইসলাম লিটনসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠান শেষে ডিমলা উপজেলা বিএনপির প্রতিটি ইউনিটের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।