“নারী দিবস কী জানি না, এই দিবস আমাদের কোনো উপকারে আসে না”

✒️ নিজস্ব প্রতিবেদক:

by Newsroom

বয়সের ভারে ন্যুব্জ ঝলমলি রানী (৮০) প্রতিদিনই কাজ করেন। শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না, তবুও থেমে থাকার উপায় নেই। কাজ করে যা পান, তা দিয়েই ওষুধ কেনেন, বাকিটা দেন ছেলের হাতে। এই বয়সেও কেন কাজ করছেন—প্রশ্ন করতেই ম্লান হাসি দিয়ে বললেন, “নারী দিবস কী জানি না, এই দিবস আমাদের কোনো উপকারে আসে না। নারী দিবসেও আমরা কাজ করি। কাজ না করলে খাবো কী? যতদিন পারবো কাজ করবো। ছেলের সংসারে কিছুটা সাহায্য আর কি! যখন পারবো না, তখন ছেলে দেখবে।” কিন্তু আদৌ কি দেখবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেন না ঝলমলি রানী।

এই এলাকায় এমন শত শত শ্রমজীবী নারী আছেন, যারা জানেনই না নারী দিবস কী। তাদের কাছে দিন মানে কাজের দিন, কাজ না করলে উপার্জন নেই, খাবারও নেই।

ডোমার উপজেলার সোনারায় বাজারে আলু বাছাই করতে এসেছেন দুই সন্তানের মা লাইলী বেগম (৩৫)। নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে হতবাক হয়ে বললেন, “আমরা কোনো দিবস বুঝি না। ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। অভাবের তাড়নায় সংসার চালাতে এসেছি। পুরুষের সমান কাজ করি, কিন্তু আমাদের বেতন তাদের সমান দেয় না। যদি দিতো, তাহলে আমাদের সমস্যাগুলো থাকতো না।”

লাইলীর মতো শতাধিক নারী এখানে কাজ করছেন আলু বাছাইয়ের বিভিন্ন সেটে। প্রতিদিন ভোরে রান্নাসহ ঘরের সব কাজ সেরে সকাল ৭টার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন তারা। তবে কোনো কোনো দিন কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়।

৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ঘুনুবালা জানান, “প্রতিবছর নারী দিবস হয়, আপনাদের মাধ্যমেই শুনি। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। কাজ করলে টাকা পাই, না করলে এক গ্লাস পানিও জোটে না।”

কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ অথচ এখনো নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

মমিনা নামে এক নারী শ্রমিক বললেন, “আমরা পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করলেও মজুরি কম পাই। পুরুষ শ্রমিকরা ৫০০ টাকা পেলেও আমরা পাই ২৫০-৩০০ টাকা।”

বিধবা ঘুনুবালা (৬৫) বিয়ের তিন বছরের মাথায় দুই সন্তানসহ স্বামীকে হারান। পরে দুই সন্তানও মারা যায়। এখন ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন। প্রতিদিন কাজ করে দিন পার করেন। তিনি বলেন, “বিধবা ভাতা পাই, কিন্তু ওষুধের টাকাও হয় না। সরকার যদি ভাতার পরিমাণ বাড়াতো, তাহলে আমাদের মতো বিধবাদের কষ্ট কিছুটা কমতো।”

প্রতিবছর ৮ মার্চ জাঁকজমকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ নারীই জানেন না তাদের অধিকার কী। শহর হোক বা গ্রাম—মেহনতি নারীদের কাছে নারী দিবস আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই।

You may also like

Leave a Comment