নীলফামারীর সৈয়দপুরে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নাশকতার অভিযোগে বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জুনকে গ্রেফতার করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলী গ্রামের নুর ইসলাম ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় নুর ইসলাম নিজে বাদী হয়ে ৬ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর থানায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪)। মামলায় মনিরুজ্জামান জুন ২ নম্বর আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ থাকায় তাকে অপারেশন ডেভিল হান্ট-এর আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ মামলার অন্যান্য আসামিরা পলাতক থাকলেও চেয়ারম্যান জুন নিজ বাড়িতে অবস্থান করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এছাড়া তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং শহরে দিন-রাত প্রকাশ্যে চলাফেরা করতেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার এই দাপুটে অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনের নীরবতা ছিল প্রধান কারণ।
আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই মনিরুজ্জামান জুনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য এবং মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী রাবেয়া আলিম ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিনের ছত্রছায়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তিনি। এমনকি ভিজিএফের চাল চুরির ঘটনা কভার করতে গিয়ে তিনজন সাংবাদিককে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভিজিএফের চাল বিতরণ না করে এলএসডি গুদাম থেকে পাচারের সময় প্রশাসন চাল উদ্ধার করে বিক্রি করলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মহিলা এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে ৯৭ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ এনে নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে পুরো অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সৈয়দপুরে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়। একটির বাদী সৈয়দপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ বাবলু এবং অন্যটির বাদী গুলিবিদ্ধ নুর ইসলাম।
এসব মামলার আসামিরা পলাতক থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতারে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে আসামিদের ধরতে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন নীরব ছিল। তবে সরকার অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করার পর পুলিশ সক্রিয় হয় এবং এই প্রথমবার এজাহারভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হলো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মেহেদী হাসান খান মারুফ জানান, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মনিরুজ্জামান জুনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে নীলফামারী জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।