জলঢাকায় গৃহত্যাগ করে সাধুর নির্জন সাধনা, কারো সাথেই কথা বলবে না ১২ বছর 

✒️জলঢাকা (নীলফামারী) থেকে:

by Newsroom

নীলফামারীর দেওনাই নদীর তীরে প্রায় তিন বছর ধরে দেখা মিলছে এক অদ্ভুত সাধুর, যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মহাদেবের আরাধনায়। রঞ্জিত চন্দ্র রায় নামের এই সাধু ১২ বছরের জন্য ধ্যান এবং মৌনব্রত পালনের সংকল্প নিয়ে গৃহত্যাগ করেছেন। সাধনার এই কঠোর শর্তে তিনি কারো সাথে কথা বলেন না; তার মনের ভাব প্রকাশ করেন কেবলমাত্র কাগজে লিখে।

রঞ্জিত রায় জলঢাকা উপজেলার পাইটকাপাড়ার একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন, ২০১৯ সালে ভারতে তীর্থ শেষে দেশে ফিরে সংসার ত্যাগ করেন। এরপর ২০২১ থেকেই তিনি নিজের সবকিছু ছেড়ে একাকী ধ্যানমগ্ন।

এলাকাবাসী জানান, রঞ্জিত সাধু ভারতের সাধুদের জীবনধারা অনুসরণ করে নির্জন জীবনযাপন করছেন। তিনি শুধু শাকসবজি, ডাল ও ভুট্টা খেয়ে বেঁচে আছেন এবং কারো সঙ্গে মিশছেন না। স্থানীয় ভক্ত আর পরিবার সাধুর আহার যোগান দেয়। তার এই সাধনা আরও ৯ বছর অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তাকে নিয়ে এলাকাবাসী গর্বিত।

নির্জন নদীর ধারে শিব ও মহাদেবের পূজা অর্চনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। রঞ্জিত সাধু খাতায় লিখে জানায়, ১২ বছর পর এখানে এক কোটি টাকার কাজ শুরু হবে বলে মহাদেব তাকে জানিয়েছে। এখানে আমি জীবন শেষ করতে চাই। আমাকে যেন সংসারে ফিরিয়ে না নেওয়া হয় এমনটি দাবী করেন এই সাধু।

রঞ্জিত সাধুর ছেলে সিবু রায় জানান, ভারত থেকে ফিরে তার বাবা ১২ বছর একাকী সাধনার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। তিনি ভাত না খাওয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নদীর পাড়ে খড়ের একটি ঝুপড়ি তৈরি করে সেখানে থাকতে শুরু করেন। পরে ঝড়-বৃষ্টিতে ঘরটি ভেঙে গেলে পরিবার থেকে একটি টিনের ঘর ও উপাসনালয় নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তার বাবা ১২ বছরের সাধনা শেষে সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করতে চান। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি কঠিন হলেও এখন তারা মানিয়ে নিয়েছেন।

রঞ্জিত সাধুর এই জীবনযাপন ধর্মীয় আনুগত্য ও আত্মনিবেদনকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যা বর্তমান সমাজে এক বিরল উদাহরণ। তার এই কষ্টের সাধনা সফলভাবে সম্পন্ন হোক এমনটাই কামনা করেছেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী।

You may also like

Leave a Comment